প্রকাশিত: Mon, Jan 8, 2024 11:41 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 12:29 PM

[১]গণতন্ত্র রক্ষায় এই নির্বাচন যুগান্তকারী [২]ড. ইউনূসের উচিত নিজের কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া [৩]তারা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায়: বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী

সালেহ্ বিপ্লব: [৪] শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। এর মধ্যদিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করেছি। জনগণের যে অধিকার আছে, ক্ষমতা যে তাদের হাতে; এই নির্বাচনে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে, আমরা তা প্রমাণ করেছি। 

[৫] সোমবার বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সায়মা ওয়াজেদ ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি উপস্থিত ছিলেন।

[৬] বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে জন্ম নেওয়া দলগুলো নিজেদের চালাতে পারে না। তাদের জনসমর্থন নেই। সুতরাং তারা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায়।

[৭] বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রশ্ন করেন, আপনি প্রধান বিরোধী দলকে ২০১৮ সালের পর থেকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে গতকালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেননি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সীমিত করা হয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মীরা আপনার সরকারের সমালোচনা করছেন। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে কোনো বিরোধী দল নেই?

[৮] জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  প্রতিটি দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। সেখানে যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এই না যে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে মানুষ অংশ নিয়েছেন কি না। আপনি যে দলের (বিএনপি) কথা বলেছেন, তারা আগুন দেয়, মানুষ হত্যা করে। কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এটা কি গণতন্ত্র? এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে।

[৯] বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন এবং অর্ধেকের কম ভোট পড়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি এখানে গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন। মানুষের অংশগ্রহণই বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি মানুষকে এ নির্বাচনে ভোট না দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেননি।

[১০] প্রধানমন্ত্রী বিবিসির সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, বিএনপি কত মানুষ মেরেছে, সে প্রশ্ন তিনি করেননি। তারা ২০১৪-১৫ সালে যা করেছে, তাতে তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।

[১১] ভারতের টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেবাদ্বীপ পুরোহিতের প্রশ্ন ছিল, নির্বাচন শেষ হয়েছে। আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন আপনার বিরোধী দলের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?

[১২] জবাবে শেখ হাসিনা বলেন,  আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?

[১৩] বিদেশি এক সাংবাদিক প্রধামন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তার এই বিজয় উদ?যাপনের সময় তিনি কি ড. ইউনূসকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনূসের বিষয়টা শ্রম আদালতের। তার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বঞ্চিত এবং তারা মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন ভঙ্গ করেছেন, নিজের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। তাঁর ক্ষমার বিষয়ের প্রশ্ন আমার কাছে আসে না। বরং তার উচিত নিজের কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

[১৪] বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিচালনাকারী নারী নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করে লৌহমানবী হিসেবে অভিহিত করা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালানো সময় পুরুষ না নারী, সে চিন্তা করা উচিত নয়। একজন নারী হিসেবে তিনি কখনোই মনে করেন না তার কোনো বাধা আছে। তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। নারী একজন মা। যিনি পরিবার ও বাচ্চাদের দেখেন ও বড় করে থাকেন। মাতৃস্নেহ থেকেই তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।

[১৫] প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি খুবই সাধারণ নারী। দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ রয়েছে যে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের উন্নত জীবন দিতে হবে। তিনি সেটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

[১৬] সুশাসন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ির প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।

[১৭] এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সাংবাদিক অশোকা রাজের প্রশ্ন ছিল, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য কী? নির্বাচনে জয়ের পরে ভারত থেকে বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে কী ধরনের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন?

[১৮] জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের বড় বন্ধু। ১৯৭৫ এ তার পরিবারকে হত্যার পর ভারত তাকে ও তার বোনকে আশ্রয় দিয়েছিল। যদিও কিছু সমস্যা আছে কিন্তু সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা হয়। এ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের নীতি।

[১৯] ওয়াশিংটন থেকে আসা এক পর্যবেক্ষক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। সম্পাদনা: ইকবাল খান